কিছু হালাল ব্যবসার আইডিয়া
একজন মুসলমান উদ্যেক্তার প্রথম জানার বিষয় হলো হালাল ব্যবসা। ইসলামে একজন সৎ ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে। সুতরাং, হালাল ব্যবসা সম্পর্কে আইডিয়া থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি।
হালাল ব্যবসা ধারণা এসেছে ইসলামী শরীয়াহ থেকে। কারণ, কোন ধরণের ভালো সার্ভিস মূলত নির্ভর করে পণ্যের প্রয়োজনীয়তা, পণ্যের মান, পণ্যের চাহিদা এবং কতটুকু হালাল হবে তার উপর। কার্যক্ষমতা+উৎপাদনশীলতা+মুনাফা+হালাল হল এই ব্যবসায়ের মূলনীতি।
মুসলিম উম্মাহ এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য এই ব্যবসা প্রচলিত। এই ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে আপনার প্রয়োজন হতে পারে ইসলামিক এবং ব্যবসা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান। ব্যবসায়ের এই ধরণের ক্ষেত্রে মুনাফা+আল ফাতহ কাজ করে থাকে। মূলত গ্রাহকরা, কর্মচারী, সংগ্রাহকরা, মালিক, কমিউনিটি, মুসলিম উম্মাহ সমূহ অংশীদারি-ত্ব গ্রহণ করতে পারবেন এক্ষেত্রে।
হালাল ব্যবসা
ব্যবসায় উদ্যোগ
ব্যবসায় উদ্যোক্তা ধারণাটি মূলত পুরোপুরি যেকোনো দেশের আইন এবং মূলধনের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। গতানুগতিক ব্যবসা মূলত, কিভাবে মানুষ মুনাফা অর্জন করতে পারে, সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কার্যক্ষমতা+উৎপাদনশীলতা+যে কোন উপায়ে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করাটাই গতানুগতিক ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য।
অন্যদিকে হালাল ব্যবসা তার অসাধারণ কিছু গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্যে জন্য নিজেকে অন্যদের তুলনায় আলাদা করে রেখেছে। শরীয়াহ মোতাবেক সেই সকল গুণাবলিসমূহ আলাদা করে তুলে ধরা হল।
হালাল ব্যবসা বৈশিষ্ট্য
১. তাকওয়া
আল্লাহকে ভয় করা এবং দোষগুণ সকল কিছু মহান আল্লাহ তা’য়ালা দেখছেন, সেই ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত হল হালাল ব্যবসা। অন্তর থেকে এই বিশ্বাস করতে করতে হবে এবং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাতে হবে।
ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়, ব্যবসায়ে এমন কোন কিছু করার অনুমতি প্রদান করে না। মহান আল্লাহ তা’য়ালা নির্ধারিত যে পথে হালাল-ভাবে আয় করা যায় শুধুমাত্র সেই পথেই এই হালাল ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
সূত্র: মুসলিম, মিশকাত হা/১৬০৭, ২৭৯৩।
২. সালাত
উদ্যোক্তাদের অবশ্যই ইসলামের অনুসারী হতে হবে। আমাদের প্রিয়-নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিজেও একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন এবং হালাল ব্যবসা করতেন।
মূলত সালাতের পর পরই ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয় সামনে চলে আসে। ব্যবসায়ের আগে সকল ধরণের ইবাদাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, বিশেষ করে ফরয ইবাদাত।
সূত্র:সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭
৩. সত্যবাদিতা
হালাল ব্যবসায়ী সব সময় তাদের গ্রাহকের সাথে সত্য কথা বলে। কারণ, নীতিবান এবং সত্যবাদী ব্যবসায়ীরা শেষ বিচারের দিন শহীদের সাথে অবস্থান করবেন।
সূত্র: বুখারী, হা/২০৭৯; মুসলিম হা/১৫৩২
৪. পরোপকারী
ব্যবসায়ের মধ্যমে সমাজে উন্নয়ন, অনুমতি ইসলাম প্রদান করে থাকে। অন্যদিকে হালাল ব্যবসায়ীদের সেই সমাজ গঠন করার নিমিত্তে কাজ করে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের যাকাত প্রদান করা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি। তাই হালাল ব্যবসায়ী নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যে, যাদের মধ্যমে সমাজের উন্নতি সাধন হবে এবং সমাজের উপকার হবে।
সূত্র: সুরা নিসা : ২৯
৫. শরীয়াহ জ্ঞান
একজন হালাপ্রেনীয়রশিপ ব্যক্তি হতে হলে, যতগুলো গুণাবলীতে নিজেকে গুণান্বিত করতে হবে তাদের মধ্যে অন্যতম হল যে মা-কাসিদ আল শরিয়াহ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান থাকা। হালাল আর তৈয়ে-বান এবং ইসলামে অনুশাসনের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, হালাল কনসেপ্ট একটি ধারা যা মূলত প্রোডাকশন, লজিস্টিক, প্যাকেজিং, স্টোরেজ এবং অন্যকিছু ধারণার উপর বিদ্যমান থাকে। যাইহোক একজন হালাল ব্যবসায়ী হতে হল আপনার ব্যবসায়ের মধ্যে ইসলামের পূর্ব জ্ঞান থাকা উচিত।
সূত্র: সূরা জিন: ২৬, ২৭
এছাড়া, হালাল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে:
- পণ্য যেন হালাল হয়।
- ওজনে কম দেয়া যাবে না ও প্রতারিত করা যাবে না।
- বিক্রিত মাল ফেরত নেয়ার বিধান রাখতে হবে।
- সুদ মুক্ত লেনদেন থাকতে হবে।
- ভেজাল পণ্য ও ত্রুটি যুক্ত পণ্য বিক্রি করা যাবে না। পণ্যে ত্রুটি থাকলে আগেই বলে দিতে হবে।
- কৃত্রিম সংকট তৈরি করা যাবে না। ইত্যাদি আরও অনেক বিষয় রয়েছে।
হালাল ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সুযোগ
ইসলামের জ্ঞানকে পরিস্ফুটিত করা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে, ইসলামে ব্যবসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। মূলত হালাল ব্যবসা, ইসলামী অনুশাসন মেনে, ইসলামী জীবন-ব্যবস্থায় মহান আল্লাহর দেওয়া বিধি মোতাবেক সমাজের অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখার একটি অন্যতম ক্ষেত্র।
হালাল বিজনেস উদ্যোগ কোরআন মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনা করে রসূল (সা:) এর দেওয়া উপদেশকে কাজে লাগানোর একটি কৌশল। বর্তমানে হালাল ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের এর, এক বিশেষ জরিপ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য রিপোর্টে আলোকপাত করা হয়ে যে ,বর্তমান সময়ে বাজার ব্যবস্থাপনার আলোকে বাজারের মূল্য প্রায় ৪.৭ ট্রিলিয়ন। ২০২৪ সাল নাগাদ এই মূল্য আরও বাড়তে পারে বলে কর্তৃপক্ষ ধারণা করেছেন।
ইসলামী স্ট্যাটিস্টিক্স মতে, হালাল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় সেক্টরের মধ্যে অন্যতম হল যে, ইসলামী ফ্যাশন, মিডিয়া এবং রিক্রিয়েশন, মুসলিম ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম, হালাল ফার্মাসিটিকুউলস এবং হালাল কসমেটিক্স।
হালাল ব্যবসা আইডিয়া
১. হালাল ফুড
গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনোমিক ২০১৯/২০ এর এক রিপোর্টে বলা হয় যে, মুসলিমরা হালাল ফুড এবং বেভারেজ উপর ২০১৮ সালের দিকে ১.৩ বিলিয়ন অর্থ খরচ করেছে। যা ২০২৪ সালের দিকে ১.৯ বিলিয়নের দিকে উন্নতি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে হালাল ফুড এবং বেভারে-জ মার্কেটে দিন দিন উন্নত হচ্ছে।
যা হালাল ফুড, হালাল বেভারেজ এবং হালাল মাংশের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সারাবিশ্বের মধ্যে উৎপাদিত ৪৫,০০০ টন খাবারের মধ্যে শুধুমাত্র ১০ ভাগ খাবার হালালের পর্যায়ে পরে থাকে। মূলত সাপ্লাই এবং অন্যান্য সেক্টরের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বেশি নজর কেড়ে থাকে।
তাই হালাল ব্যবসায় উদ্যোক্তাদের এই সেক্টরে নিজেদের একটি প্রভাব বিস্তার করার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা এই সেক্টরে হালাল খাবার, ব্যবহারের এনে এই ব্যবসাকে নিজেদের করে নেবার এক ধরণের সুযোগ রয়েছে।
এই সুযোগটি মূলত হালাল, অর্গানিক এবং স্বাস্থ্যকর খাবার, বেবি ফুড, অনলাইন রেস্টুরেন্ট বুকিং, রিটেল কমার্স এবং হোল-সেল মার্কেট তাদের পণ্য সমূহ সরবরাহ করতে পারে। এই যেমন, বর্তমানে খেজুর, কালোজিরা, ত্বীন ইত্যাদি খাবারের ব্যপক চাহিদা রয়েছে।
২. ইসলামী ফ্যাশন
মুসলিম মিলিনিয়রদের এই সেকশনে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার একটি বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৮ সালে ইসলামী ফ্যাশনের ২৮৩ বিলিয়ন ডলার বাজার মূল্য নির্ধারিত হয়। সেই সাথে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই টার্গেট ৪০২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হয়।
উদ্যোক্তাদের এক ধরণের সুযোগ রয়েছে এই সেক্টরে নিজের পণ্যসমূহের মাধ্যমে নিজের একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারার ক্ষেত্রে। ফ্যাশন ডিজাইন কি? কিভাবে ফ্যাশন ডিজাইনার হবেন? এই লেখাটি পড়লে জানতে পারবেন।