এফ-কমার্স টিপসবিজনেস টিপসমার্কেটিং টিপস

ফেসবুক এর মাধ্যমে কিভাবে আপনার ছোট আকারের ব্যবসার প্রচার করবেন

ফেসবুক বর্তমান সময়ে সবথেকে বেশি আলোচিত ও ব্যবহৃত একটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট। ইন্টারনেটের প্রতুলতা ও ডিজিটাল ডিভাইস গুলোর সহজলভ্যতার কারণে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে চলেছে। 

ফেসবুকের এত বেশি জনপ্রিয়তার অন্যতম একটি মূল কারণ হলো ব্যবসায়িক কাজে এর সাফল্য। বর্তমানে ফেসবুকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যবসা বেশ রমরমা। কেননা ফেসবুক এমন একটি জায়গা যেখানে পণ্যের মার্কেটিং করা যেমন সহজ তেমনই পণ্যে বিক্রয় করাও সহজ। 

কেননা ফেসবুক এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া সাইট যেটি সকল বয়সের সব ধরনের মানুষ নিয়মিত ব্যবহার করেন। ফলে খুব সহজে এখান থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা পাওয়া যায়। যে কারণে ফেসবুকে কে ভিত্তি করে এখন অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা গড়ে উঠছেন। কেননা অতি স্বল্প বাজেট নিয়েই ফেসবুক বিজনেস শুরু করা যায়। কোনো দোকানভাড়া কিংবা পরিবহনের কোনো ঝামেলাও থাকে না।

এখন প্রশ্ন থাকতে পারে এসকল ছোট ব্যবসার জন্য তো প্রচার ঘটানো অনেক দুঃস্কর। ফেসবুকের মাধ্যমে এটি কিভাবে করা যায়?

বন্ধুরা! এটি খুবই সহজ একটি কাজ। আমি নিজেও বর্তমানে এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছি। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমার অভিজ্ঞতা থেকেই কিছু খুবই দরকারি টিপস দেয়ার চেষ্টা করব।

চলুন তাহলে জেনে নেই ফেসবুকের মাধ্যমে কিভাবে ছোট আকারের ব্যবসার প্রচার করবেন।

ফেসবুক এর মাধ্যমে যেভাবে ছোট আকারের ব্যবসার প্রচার করবেন

ছোট আকারের বিজনেস পরিচালনা ও এর জন্য ফেসবুক অন্যতম সেরা একটি প্লাটফর্ম। আপনি নিজে যখন এর থেকে ফায়দা উঠাতে শিখবেন তখন আপনারও এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকবে না। কেননা ব্যবসা প্রচার-প্রচারণার জন্য ফেসবুক কিছু অসাধারণ ফিচার এর ব্যবস্থা রেখেছে। যেগুলোকে ভিত্তি করে একজন ছোট আকারের ব্যবসায়ী তার ব্যবসার প্রচার ঘটাতে পারে। 

তাহলে চলুন এক নজরে দেখে নেই ফেসবুকের সাহায্যে ছোট আকারের ব্যবসার প্রচার করার উপায়গুলো কি কি হতে পারে।

১-ফেসবুক এ বিজনেস পেজ তৈরি:

ফেসবুকে ছোট আকারের ব্যবসা প্রচার করতে সবথেকে সহজ এবং সেই সাথে ফলপ্রসূ যে মাধ্যমটি সেটি হলো ফেসবুক পেজ। ব্যবসার ধরনের সাথে মিল রেখে একটি বিজনেস পেজ তৈরি করা যেতে পারে যেটি আপনার ব্যবসাকে পেজের ফলোয়ার্সদের নিকট রিপ্রেজেন্ট করবে।

তাই বিজনেস পেজকে অবশ্যই প্রফেশনাল লুক দিয়ে তৈরি করতে হবে। যাতে মানুষ এটা একবার দেখেই বিশ্বাস করতে পারে এবং আস্থা রাখতে পারে। কেননা ফেসবুকে ব্যবসার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জটি হলো মানুষের বিশ্বস্ততা অর্জন।

২-পেজে নিয়মিত পোস্ট করা ও ফলোয়ার্স বাড়ানোর চেষ্টা করা:

ফেসবুকে অবস্থিত কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের সাথে নিয়মিত সংযুক্ত থাকার সহজ উপায়টি হচ্ছে নিয়মিত পেজে পোস্ট করা। নিয়মিত পোস্ট করার মাধ্যমে আপনার পণ্যের আপডেট , অফার্স ও অন্যান্য সেবাসমুহ গ্রাহকের নিকট পৌঁছে যেতে পারে। 

তবে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে পোস্টের কন্টেন্ট এর মানের উপর। মানুষ এখন খুব রুচিশীল। তারা তুলনামূলক মানসম্মত কন্টেন্ট পড়তেই অধিক পছন্দ করে। আপনাকে আপনার পোস্টে এমন সব কন্টেন্ট যুক্ত করতে হবে যেগুলোর মাঝে অল্প কথায় অধিক ভাবার্থ নিহিত থাকে। এতে ভিজিটরদের আকর্ষণ বাড়বে।

এর পাশাপাশি আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পেজে ফলোয়ার্স বাড়ানো। পেজে যত বেশি ফলোয়ার্স বাড়াতে পারবেন ব্যবসার প্রচার তত দ্রুত তত বড় পরিসরে হতে থাকবে। 

তাই ফলোয়ার্স বাড়াতে যেটা করবেন:

  • প্রচুর পরিমাণে অ্যাক্টিভ থাকুন। 
  • গ্রাহকের সাথে সর্বদা কানেক্টেড থাকুন। 
  • কাস্টমার এর চাহিদা বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেই অনুযায়ী পণ্য সিলেক্ট করুন।
  •  পেজে কেবল বিজনেস রিলেটেড পোস্ট করা থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি এমন সব পোস্ট করুন যেগুলো মানুষের কাজে আসবে। মানুষ কিছু শিখবে। অথবা এন্টারটেইন এর ব্যবস্থা করুন। হতে পারে কোনো গেম বা কুইজ। 
  • কাস্টমারের যেকোনো প্রশ্নের উত্তর তাৎক্ষণিক দেওয়ার চেষ্টা করুন। 

এভাবে ধীরে ধীরে ফলোয়ার্স বাড়াতে পারলে পেজে আপনা আপনি লাইক কমেন্টস বাড়তে শুরু করবে এবং সেই সাথে পণ্যের প্রচার বাড়বে। তো লাইক কমেন্টস বাড়াতে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো মাথায় রাখবেন:

 

  • বিভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে কাস্টমারের নিকট প্রশ্ন ছুড়ে দিন। আপনার কাজের ব্যাপারে তাদের মন্তব্য জানার চেষ্টা করুন। তাদের চাহিদা গুলো খুঁজে বের করুন।
  • পেজে প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন। সে অনুযায়ী পুরস্কার এর ব্যবস্থা রাখুন। 
  • নিজের আলাদা কোনো প্রতিভা প্রকাশের চেষ্টা করুন। যেমন- নাচ , গান , আবৃত্তি , চিত্রাঙ্কন , ডেকোরেশন ইত্যাদি।

তো বন্ধুরা! এতক্ষণ যে বিষয়গুলো তুলে ধরলাম এগুলো যদি মাথায় রেখে কাজ করেন তবে অবশ্যই আশা করি আপনার বিজনেস পেজে ফলোয়ার্স বাড়বে এবং তারা বেড়িয়ে যাবেনা। ফলে আপনার বিজনেসের অতি দ্রুত হতে থাকবে।

৩-পেজের লিংক শেয়ার করুন:

এই উপায়টি খুবই কার্যকর। বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে আপনার বিজনেস পেজের লিংকটি শেয়ার করে দিন আকর্ষণীয় কিছু হেডলাইনস দিয়। এতে করে ঐ সব গ্রুপ বা পেজের যারা ভিজিটর তারা আপনার পেজটি ভিজিট করবে এবং বিজনেস সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে। 

পাশাপাশি এই লিংক আপনার পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন পোস্টে সংযুক্ত করে দিতে পারেন। এতে করে পেজে ভিজিটর বাড়বে এবং ব্যবসার প্রচার ঘটবে।

৪-ফেসবুক পেইড এড দেওয়ার ব্যবস্থা করুন:

কথায় আছে “টাকায় টাকা আনে”। অর্থাৎ আপনি যতটুকু প্রদান করবে ততটুকু ভোগ করতে পারবেন। বরং আরও বেশি পাবেন। তাই আপনি যদি শতভাগ সাফল্য আশা করেন তবে আপনার ব্যবসার প্রচার হতে হবে বহুগুণে এবং এ জন্য আপনাকে অবশ্যই ফেসবুক পেইড এড এর সাহায্য নিতেই হবে।

কেননা যখন কোনো ক্রমেই পেজে ফলোয়ার্স আসবেনা তখন পণ্যের প্রচার ও লাইক কমেন্টস বাড়াতে ফেসবুক পেইড এড এর কোনো বিকল্প নেই। খুবই অল্প পরিমাণ টাকা খরচ করে যেমন- ১০০-৫০০ টাকা খরচ করেই আপনি প্রথম পর্যায়ে এড দিতে পারবেন। একটি ফেসবুক পেইড এড এর মাধ্যমে আপনার যে লাভগুলো হবে:

  • একটি পেইড এড এর মাধ্যমে পণ্যের প্রচার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের নিকট পৌঁছে দেয়া যায়। 
  • অনেক অল্প সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে মার্কেটিং এর কাজ সেরে ফেলা যায়।
  • অনের অল্প সময়ের ভেতর বহু মানুষের নিকট পণ্যের প্রচারণা চালানো যায়।
  • ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবস্থার কারণে তথাকথিত ব্যানার ,ফেস্টুন , পেইন্টিং , টিভি-রেডিও বিজ্ঞাপন ইত্যাদির কোন ঝামেলা নেই।
  • টার্গেটেড কাস্টমার এবং লোকেশন অনুযায়ী পোস্ট করা যায়।

সুতরাং এদিক সেদিক আর না ভেবে একটি বিজ্ঞাপন দিয়েই দেখতে পারেন যে বিজনেস এর প্রচার ঘটাতে এটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ।

৫-ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করুন:

পার্সোনাল ফেসবুক অ্যাকাউন্টে থাকা ফ্রেন্ডদের পেজে ইনভাইট করুন এবং প্রত্যেক ফ্রেন্ডের আইডিতে থাকা বাকি ফ্রেন্ডদেরও ইনভাইট করুন। এতে করে পেজে ভিজিটর যেমন বাড়বে সেই সাথে পণ্যের প্রচারও হবে।

৬-ওয়েবসাইটের সাহায্য নিন:

ফেসবুকে পণ্যের প্রচার অতি দ্রুত ও সফলতার সাথে করতে ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অপশন। বিজনেস রিলেটেড একটি ওয়েবসাইট ওপেন করে সেখানে প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট পাবলিশ করার পাশাপাশি সেখানকার লিংক ফেসবুক পেজে শেয়ার করে দিতে পারেন। এতে করে দুটি প্ল্যাটফর্মের কাস্টমারকে আপনি এ্যাংগেজ করে রাখতে পারবেন। 

শেষ কথা

প্রিয় পাঠকবৃন্দ! আর্টিকেলটি শেষ করার পূর্বে আপনাদের সঙ্গে আরও কিছু কথা শেয়ার করতে চাই। 

বন্ধুরা! আমরা সকলেই জানি ব্যবসায় সফলতা আনতে বা সফলতা ধরে রাখতে ব্যবসার প্রচারণা ঘটানো ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আবার সেটা যদি হয় ফেসবুকের মতো একটি প্লাটফর্মে। কেননা বর্তমানে ফেসবুকে বিজনেস প্রতিষ্ঠা করা খুবই কঠিন। এখানে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই বলবো অতি ধৈর্য সহকারে কাজ করুন।

ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য নিয়ে উপরে দেয়া টিপসগুলো যদি ফলো করেন তবে আশা করি ব্যবসার প্রচারণাও হবে এবং আপনি সফলও হবেন ইনশাল্লাহ্।

সকলের প্রতি শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!