এফ-কমার্স টিপস

কিভাবে ফেসবুক বিজনেস পেজটি আকর্ষনীয় করবেন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেশিরভাগ অনলাইন বিজনেস গড়ে উঠেছে ফেসবুককে কেন্দ্র করে। দিন দিন অনলাইন বিজনেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই প্রতিনিয়ত বিজনেসের প্রতিযোগীতা বেড়ে চলছে। প্রতিযোগীতা টিকে থাকার জন্য  বিজনেস পেজ টা একটু নতুনভাবে এবং ভিন্নভাবে সাজাতে হবে। যার ফলে বৃদ্ধি পেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত সেল।বিক্রয় অনেকটা ই নির্ভর করে ফেসবুক বিজনেস পেজের সৌন্দোর্যের উপর।

কিভাবে ফেসবুক বিজনেস পেজটি আকর্ষনীয় করে তুলবেন

প্রোফাইল গুছিয়ে নিন

ফেসবুক বিজনেস পেজের জন্য অন্যরকম একটা নাম থাকলে নিজেকে আলাদা করতে পারবেন ঠিকই, তবে ব্যবহারকারীরা পেজটাকে সহজে খুঁজে পাবে না। মাথায় রাখতে হবে মানুষের খোঁজার অভ্যাস। অর্থাৎ মানুষ গুগল বা ফেসবুকে কী লিখে সার্চ করছে সেটা মাথায় রেখে পেজের নাম ও ইউআরএল ঠিক করুন। এক্ষেত্রে পরিচিত ব্র্যান্ড হলে সে নামেই পেজ খোলা যায়। আর যদি ব্র্যান্ডের চিন্তা মাথায় না থাকে, তবে পেজের নাম বা ইউআরএল যতটা সম্ভব সাধাসিধে রাখুন।

অনেকে আবার কোনোরকম পেজ খুলেই লাইক বাড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ডেসক্রিপশন, স্লোগান, ঠিকানা, খোলা থাকার সময়, ওয়েবসাইট, ফোন নম্বর, লোকেশন এসব ঠিকঠাক না করলে সেই পেজের প্রচার করবে না ফেসবুক। তাই সময় নিয়ে এসব তথ্য পূরণ করুন। নিজের মতো করে একটি এনিমেটেড বা ভিডিও কাভার যোগ করতে পারলে বেশ ভালো। কোনও ছবি আপলোড করলে সেটার একটা সুন্দর বর্ণনা লিখতে ভুলবেন না। পেজের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোস্টটাকে ‘পিন’ করে রাখুন।

ইউজার নেম

বিজনেস পেজের নাম পছন্দ করার ক্ষেত্রে কিছু টিকস মাথায় রাখতে হবে,

  1. ছোট ও শুনতে ভাল লাগে এমন নাম।
  2. বিজনেস এরসাথে প্রাসংগিগ থাকতে হবে।
  3. জনপ্রিয় কোনা বিজেনেস এর নামের কাছাকাছি যেন না হয়।
  4. অবশ্যই নামের বিপরীতে ডোমেইন যেন এভাইলেবল থাকে

বিজনেস পেজের নামকে ইউজার নামে হিসেবে সেট করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। অনেক সময় ঠিক ভাবে ইউজার নাম হিসেবে সেট করা যায়না, যদি না হয় পাওয়া যায় হালকা মডিফাই করে ইউজার নেম সেট করতে হবে। মনে রাখতে হবে  ইউজার নেম যেন ইউনিক এবং স্পেশাল হয় এবং এটাই বিজনেস পেজের আসল আইডেনটিটি হিসাবে গণ্য করা হয়। ইউজার নেমটি যতটা সম্ভব ছোট রাখার চেষ্টা করতে হবে। ইউজার নেম পেজের জন্য খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন কারন এটা পেজের ইউ আর এল এ হয়ে থাকে।

লোগো এবং কভার ফটো

লোগো এবং কভার ফটো যেকোন পেজের ভিজিটরদের আকৃষ্ট করে থাকে তাই এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন দেখলেই ভিজিটর ব্যবসা সম্পর্কে এবং পণ্য বা সেবা সম্পর্কে কিছুটা ধারনা করতে পারে। কভার ফটো কে আরও বেশি সুন্দর করতে হলে স্লাইডার ইমেজ অথবা  ভিডিও বানানো যেতে পারে। এইভাবেই পেজের ভিন্নতা আসবে এবং পেজকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলবে।

ক্যাটাগরি নির্বাচন

বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ফেসবুকে বিজনেস পেজ তৈরি করা যায়। তাই সঠিক ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে যার উপর নির্ভর করে ফেসবুক  বিভিন্ন ধরনের সুবিধা অফার করে থাকে।

কনটাক্ট ইনফরমেশন এবং ডেসক্রিপশন

ছোট এবং আকর্ষণীয় করে বিজনেস পেজের সম্পর্কে ডেসক্রিপশনে লিখতে হবে এমনভাবে লিখতে হবে যাতে ভিজিটর দেখলে বিজনেস  সম্পর্কে পরিষ্কার তথ্য পেয়ে যায।

কন্টাক্ট ইনফরমেশন যেভাবে দেওয়া উচিৎ

  1. একটিভ মোবাইল নাম্বার দিতে হবে যাতে কেউ ফোন করলেই যেন কন্টাক্ট করতে পারে। (হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার) ।
  2. একটিভ মেইল দিতে হবে যেন কাস্টমাররা মেইল করলে রিপ্লায় পায়।
  3. ওয়েবসাইট লিংক দিতে হবে যেন কাস্টমার সার্ভিস অথাবা প্রোডাক্ট সম্পর্কে আরো বেশি অবগত হতে পারে ।
  4. সঠিক এড্রেস খুব গুরুত্বপূর্ণ কারন এটি কাস্টমারের কাছে আরও বিশ্বস্ত্ব করে তুলে।
  5. ফেসবুক পেইজে সেন্ড মেসেজ একশন বাটন এড করতে হবে

কমার্স ম্যানেজার

ফেসবুক বিজনেস পেজের মাধ্যমে কোন প্রডাক্ট সেল করতে হলে অবশ্যই কমার্স ম্যানেজার ফিচার টি ইউজ করতে হবে যার ফলে ফেসবুক বিজনেস পেজ টা আরো আকর্ষনীয় হতে সাহায্য করবে এবং ই-কমার্স ওয়েব সাইট যদি থেকে থাকে তাহলে এটা আরও বেশি সুবিধা প্রদান করে থাকবে।

মেসেজ কাষ্টমাইজড 

পেজের ভিজিটর যেন সহজে যোগাযোগ করতে পারে তার জন্য মেসেজিং অপশন টা কাষ্টমাইজড করতে হবে।

  1. ওয়েলকাম মেসেজ সেট করে দিয়ে রাখা যেতে পারে।
  2. এওয়ে মেসেজ সেট করে রাখা যেতে পারে।
  3. অটোমেটেড রেসপন্স সেট করে দেওয়া যেতে পারে।
  4. ফ্রিকুয়েন্টলি আসক কোশ্চেন এবং কোশ্চেনর উত্তর গুলো সেট করে রাখা যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কেন একটা এফ কমার্স বিজনেস ফেইল করে- কিছু প্রধান কারন

কিভাবে ফেসবুক বিজনেস পেজটি  বিক্রয় বৃদ্ধির উপযোগী করে তুলবেন

লাইক-কমেন্ট করুন

নিজের পেজে অন্যের লাইক কমেন্টের আশায় হা করে বসে না থেকে পেজের প্রোফাইল থেকে অন্যের পেজের ভালো পোস্টগুলোতে লাইক ও গঠনমূলক কমেন্ট করুন। শুধু শুধু নিজের পেজের নামটা দেখানোর জন্য এক শব্দে বা এলোমেলো কিছু লিখতে যাবেন না। এতে আপনার পেজের প্রতি কারও আগ্রহ থাকবে না। পেজের অর্গানিক গ্রোথ বাড়াতে শুরুতে আপনার পেজটি যেন ‘সবার বন্ধু’ হিসেবেই থাকে।

কল টু অ্যাকশন

বিজনেস সংক্রান্ত পেজ হলে অবশ্যই ওপরের দিকের বারে উপযুক্ত বাটন রাখবেন। কারও ক্ষেত্রে সেটা হতে পারে সেন্ড মেসেজ, কারও বেলায় সাইন-আপ। আবার পেজের ‘শপ’ সেকশনে যখন যথেষ্ট আইটেম থাকবে তখন ‘শপ নাও’ বাটনও যোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে সেন্ড মেসেজ বা কল বাটনের ব্যবহারই বেশি বলা যায়।

যোগ করুন গ্রুপ

পেজের ফ্যান-ফলোয়ার বাড়তে শুরু করলে তাদের সবাইকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। তাদের মতামত বা পোস্ট শেয়ার করার জন্য আলাদা করে একটা গ্রুপ বানিয়ে নিতে পারেন। ওই গ্রুপের কারণেও বাড়তে পারে অর্গানিক লাইক।

লাইভ

সাধারণ ভিডিও বা পোস্টের চেয়ে ১০ গুণ বেশি রিচ পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুক লাইভ ভিডিওতে। তাই পেজের সঙ্গে মানানসই কোনও আইডিয়া পেলে সেটার লাইভ করার চেষ্টা করুন। ফেসবুক এখনও লাইভ ভিডিওগুলোকে তাদের নিউজ ফিডে সবার ওপরে রাখার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে কোনও পণ্য বা সেবার ডেমো কিংবা মজার কোনও টিউটোরিয়াল দেখাতে পারেন।

পোস্টের মাপ

একটি আদর্শ অর্গানিক ফেসবুক পোস্টের দৈর্ঘ্য হলো ৪০-৮০টি অক্ষর (ইংরেজিতে, স্পেসসহ)। অল্প কথায় বেশি তথ্য দিতে পারলেই সেটার ‘রিচ’ বাড়িয়ে দেয় ফেসবুক।

ভুল তথ্য নয়

পেজের এনগেজমেন্ট বাড়াতে উল্টোপাল্টা খবর বা ভুল কিছু পোস্ট করতে যাবেন না। ভুয়া তথ্য নিয়ে ফেসবুক এখন বেশ সরব। ভুল তথ্যের ‘রিপোর্ট’ পেলে দেখা যাবে আপনার পেজটা চলে যাবে লাল তালিকায়।

সময়জ্ঞান

আপনার গ্রাহক বা পেজের অনুসারীদের অভ্যাস বা রুটিন বুঝে নিন। সেই অনুযায়ী বেছে নিতে হবে পোস্ট করার সময়। একেক ধরনের পেজে ব্যবহারকারীদের এংগেজমেন্টের সময়টাও একেক রকম। যেমন খাবার ডেলিভারি সংক্রান্ত পেজ হলে সকাল বা বিকালের সময় পোস্ট করুন, মধ্যরাতে নয়।

ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাই

আপনার বিজনেস পেজে ইনবক্স করা মাত্রই যেন ক্রেতারা কোনও না কোনও তথ্য পায়, সে জন্য অটোমেটিক রিপ্লাইয়ের ব্যবস্থা রাখুন। পেজের সেটিংস-এ গিয়ে বামপাশের মেসেজিং অপশনে যান। এরপর রেসপন্স অ্যাসিসট্যান্ট সিলেক্ট করে ‘সেন্ড ইনস্ট্যান্ট রিপ্লাইস’ সিলেক্ট করুন। চেঞ্জ-এ ক্লিক করে নিজের মতো করে বার্তাটি লিখুন। আপনার ক্রেতা বা গ্রাহক যদি শুধু এ দেশীয় হয়, তবে অভ্যর্থনার বার্তা বাংলাতেই লিখুন। সবশেষে ‘সেভ’ করুন।

ফেসবুক পিক্সেল

আপনার যদি আলাদা ওয়েবসাইট থাকে তবে সেই সাইটের ফেসবুক বিজনেস পেজের জন্য ‘ফেসবুক পিক্সেল’ অপশনটি ব্যবহার করুন। এর জন্য কিছুটা আইটি জ্ঞান থাকা চাই। পিক্সেল বলতে এখানে একটি ছোট কোডকে বোঝানো হচ্ছে যা আপনার ওয়েবসাইটে থাকবে। ওই কোডের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করা গ্রাহকদের তথ্য পাবে ফেসবুক। সেই অনুযায়ী ঠিক করতে পারবেন ‘টার্গেট অডিয়েন্স’। অর্থাৎ যারা আপনার ওয়েবসাইটে মাঝে মধ্যে ঢুঁ মারে তারাই আপনার ফেসবুকের পোস্ট যেন বেশি বেশি দেখতে পায়, সেটার বন্দোবস্ত করে ফেসবুক পিক্সেল।

শেষ কথা

মাথায় নতুন কোনও আইডিয়া আসলেই সবার আগে চাই একটা ফেসবুক পেজ। পেজ খোলা তো মিনিট দুয়েকের কাজ। এরপর ফেসবুক বিজনেস পেজ জনপ্রিয় করবেন কী করে? হুড়মুড় করে সবাই লাইক বা ফলো করবে না নিশ্চয়ই। পেজে লাইক বাড়াতে থাকা চাই ধৈর্য, জানা চাই বিশেষ কিছু টিপস।

জেনে নিনঃ ফেসবুকে গোপনীয়তা বজায় রাখতে আপনার করনীয়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
error: Content is protected !!