কিভাবে ফেসবুকে একটি ব্যবসায়িক পেজ খুলতে হয়
সারা বিশ্বে বর্তমানে যতগুলো সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) সাইট অ্যাক্টিভ রয়েছে তাদের মধ্যে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে ফেসবুক (Facebook)। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছেন। তাই ফেসবুকের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ এখন ব্যবসায়িক কাজেও ফেসবুককে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। ফলশ্রুতিতে পণ্যের মার্কেটিং বা বিপণনের জন্য ফেসবুক এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার কারণে বাংলাদেশের ছোট বড় প্রায় সকল শ্রেণীর ব্যবসায়ীগণ মার্কেটিং এর জন্য ফেসবুককে বেছে নিয়েছেন। কেননা একটা হিসাব মতে বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটির ওপরে। তাই ফেসবুকের সাহায্যে পণ্যের মার্কেটিং করা যায় কোটি মানুষের সাথে।
তাছাড়া ফেসবুক এমন একটি জায়গা যেখন সকল শ্রেণীর প্রায় সবধরনের মানুষ আসা যাওয়া করে। পাশাপাশি রয়েছে লক্ষাধিক মানুষের সঙ্গে একযোগে যোগাযোগের সুব্যবস্থা। অর্থাৎ সহজে পণ্যের মার্কেটিং লক্ষ থেকে কোটি মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া যায় বিনা খরচে।
তাই আপনিও যদি একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকেন তবে এখনি ফেসবুকের সাহায্যে মার্কেটিং এর কাজ শুরু করে দিতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো অবশ্যই আপনার একটি ভেরিফাইড ফেসবুক বিজনেস পেজ থাকতে হবে। তাই আমাদের জানতে হবে কিভাবে ফেসবুকে একটি ব্যবসায়িক পেজ খোলা যায়।
তো চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে ফেসবুকে একটি ব্যবসায়িক পেজ খুলতে হয়।
ফেসবুকে যেভাবে ব্যবসায়িক পেজ খুলবেন
ফেসবুকে বিজনেস পেজ ওপেন করা কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি স্টেপ (Step) সঠিকভাবে ফলো করলেই বিজনেস পেজটি ওপেন করা যায়। আজকের আর্টিকেলে সে সবকয়টি স্টেপ সহজভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। তাই পুরো আর্টিকেলটি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করুন।
একটি ফেসবুক পেজ ওপেন করার সময় আপনাকে যে স্টেপগুলো ফলো করতে হবে :
১. ফেসবুক প্রোফাইল লগ ইন করা (Log in into Facebook Profile)
সর্বপ্রথম আপনার personal ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুকে লগইন করুন। এরপর নিচের ছবির মতো ( blue কালার দিয়ে চিহ্নিত করা) পেজের ডান পাশে কোণায় থাকা বাটনে ক্লিক করুন।
এখানে ক্লিক করার পর নিচের ছবিটির মত আরেকটি পেজ ওপেন হবে। এবার ছবিটির মত “Page” লেখা বাটনে ক্লিক করুন।
২. Page create করা (Create Page)
এপর্যায়ে নিচের ছবির মত একটি পেজ স্ক্রিনে ওপেন হবে। এখানে “Create Page” লেখা বাটনে ক্লিক করতে হবে।
৩. Page এর category নির্বাচন করা (Select Categories)
এই ধাপে আপনার পেজের ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে। ফেসবুক পেজে বর্তমানে দুই ধরনের ক্যাটাগরি রয়েছে: “Businesses or Brand” এবং “Community or Public”. যেহেতু আমরা একটি বিজনেস পেজ ওপেন করব সেহেতু “Businesses or Brand” ক্যাটাগরি সিলেক্ট করুন।
৪. Page এর Name সিলেক্ট করা (Select Page Name)
এই স্টেপটি খুবই জরুরী একটি বিষয়। পেজের নাম ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আপনাকে বুঝে শুনে সুন্দর , অর্থবহ , ইউনিক ও সহজবোধ্য একটা নাম নির্ধারণ করতে হবে যেটা সহজেই কাউকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। নিচের ছবিতে দেয়া অংশে আপনার নির্ধারণ করা পেজের নামটি দিয়ে দিন। পেজের নাম বাংলা বা ইংরেজি উভয় ভাষাতেই দেয়া যাবে।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার দেয়া পেজের নামটি যেন ইউনিক হয়। মানে একই নামে যেন আর কোনো বিজনেস পেজ ফেসবুকে না থাকে। কেননা একই নামে একাধিক পেজ ফেসবুকে ওপেন করা যায়। যার ফলে কেউ যদি আপনার পেজে প্রবেশ করতে চায় তবে অন্য কারো একটি পেজে ঢুকে যেতে পারে। তাই আপনাকে সময় রিসার্চ নিয়ে একটি ইউনিক নেম খুঁজে নিতে হবে। যাতে আপনার পেজটি কখনও হাড়িয়ে না যায়।
৫. ব্যবসার category নির্বাচন করা (Select Category for the Business)
এই ধাপে আপনাকে আপনার ব্যবসার ক্যাটাগরি বা ধরন নির্বাচন করতে হবে। এখানে আপনি নিচের ছবির মত একটি পেজ দেখতে পাবেন। যেখানে আপনি ব্যবসার অনেক ধরন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনার ব্যবসার জন্য সুনির্দিষ্ট একটা ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন।
৬. Profile Picture সেট করা (Set a Profile Picture)
এ পর্যায়ে আপনার পেজের জন্য এমন একটি ছবি সেট করতে হবে যেটা আপনার পেজ ও বিজনেসকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে। অর্থাৎ এমন একটি meaningful ছবি আপনাকে নির্বাচন করতে হবে যা দেখে ভিজিটররা সহজেই আপনার ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। অথবা আপনি আপনার বিজনেস পেজের জন্য আলাদাভাবে লোগো সেট করতে পারেন। তবে তা অবশ্যই আকর্ষণীয় ও অর্থপূর্ণ হতে হবে।
৭. Cover Photo সেট করা (Set a Cover Photo)
প্রোফাইল ফটো সেট করার পরে এই ধাপে আপনার প্রোফাইলের জন্য একটি কভার ফটো সেট করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কযুক্ত কোন ব্যানার বা ছবি সেট করতে পারেন।
৮. About লেখা (Write on About)
কভার ফটো সেট করার পর মোটামুটি আপনার বিজনেস পেজ তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পেজটিকে ভিজিটরদের সামনে আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং পেজে প্রফেশনাল লুক আনতে আপনাকে আরও কিছু কাজ করতে হবে। যেমন- প্রথমে আপনাকে About Us সেকশনটিতে বিভিন্ন তথ্য add করে তথ্যবহুল করে তুলতে হবে। যেমন-
- User Name: প্রথমে এখানে
একটি User Name সেট করতে হবে। যাতে করে যে কেউ সার্চ করার সাথে সাথেই আপনার পেজটি পেয়ে যায়।
- Phone number: এ পর্যায়ে
এখানে আপনার ফোন নাম্বারটি সঠিকভাবে দিয়ে দিতে হবে।
- E-mail Address: ফোন
নাম্বার সেট করার পর এ ধাপে আপনার একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস প্রদান করতে হবে।
- Web Address: যদি ইতিমধ্যে
আপনার কোনো ওয়েবসাইট থেকে থাকে তাহলে এখানে ওয়েব অ্যাড্রেসটি দিয়ে দিতে পারেন। আর যদি না থাকে তবে স্কিপ করে যেতে পারেন। তবে বিজনেস রিলেটেড একটি ওয়েবসাইট থাকাই ভালো।
- Our Story: এই সেকশনটি
পেজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনাকে কিছু স্টোরি বলতে হবে। স্টোরি বলতে প্রচলিত রূপকথা নয়। আপনার নিজের বাস্তব কথাগুলো। যেমন- আপনি কেন পেজটি ওপেন করেছেন , এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি হতে পারে , আপনার ব্যবসা কতটা বিশ্বাসযোগ্য বা কেন বিশ্বাস করবে , আপনার সার্ভিস কেমন বা আপনার পণ্যের গুণগত মান কেমন। এসমস্ত তথ্যগুলো সুন্দরভাবে সহজ ভাষায় লিখে দিতে পারেন। সাথে কিছু ছবি বা লোগো সেট করে দিতে পারেন।
৯. Page Info প্রদান করা (Give Page Info)
এই ধাপে “Edit Page Info”- এ অপশনটিতে ক্লিক করে আপনার পেজ এর ব্যাপারে কিছু বাড়তি ইনফরমেশন প্রদান করতে হবে। যেগুলো আপনার পণ্যের গ্রাহকদের জন্য সাহায্যকারী হতে পারে।
এখানে Description বক্সে আপনার পেজ এর ব্যাপারে কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরতে পারেন। যা আপনার গ্রাহকদের আপনার পেজ ও এর সার্ভিস সম্পর্কে ধারণা নিতে সাহায্য করবে।
এরপর যদি আপনার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা শোরুম থেকে থাকে তাহলে তার অ্যাড্রেস বা ঠিকানা দিয়ে দিতে পারেন। ক্রেতার কখনও প্রয়োজন হলে যাতে ভিজিট করতে পারে।
পাশাপাশি একটি ম্যাপের সাহায্যে আপনার লোকেশন সেট করে দিতে পারেন এবং আপনার সার্ভিস টাইম উল্লেখ করে দিতে পারেন।
১০. Settings ঠিক করা (Put Settings)
এবার “settings” অপশনে ক্লিক করে পেজের সেটিংসে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন।
যেমন- প্রথম পর্যায়ে আপনার পেজটি এখন খালি থাকবে এবং পেজটিকে পাবলিশ দেখাবে। এখন আপনি যদি চান সবকিছু সেট করার পর পেজটি পাবলিশ করবেন অর্থাৎ পেজটি প্রাইভেট রাখবেন তাহলে settings থেকে visibility অপশনে গিয়ে এর ভিজিবিলিটি পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
এছাড়া নোটিফিকেশন অপশনে গিয়ে ইচ্ছে অনুযায়ী নোটিফিকেশন সিস্টেম সেট করতে পারেন। যেমন- আপনি কিভাবে নোটিফিকেশন পেতে চান বা কখন নোটিফিকেশন নিতে চান।
পাশাপাশি page roles অপশনের মাধ্যমে পেজের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে পারবেন। এতে করে আপনি যদি কখনও busy থাকেন বা কোনো সমস্যায় থাকেন তবে অন্য কেউ পেজটিকে active রাখতে পারবে।
আবার messaging অপশন থেকে আপনি অটো মেসেজ সিস্টেম সেট করতে পারেন। এর ফলে কোনো ক্রেতা massage পাঠালে অটোমেটিক্যালি তার কাছে প্রদত্ত উত্তর চলে যাবে। এর ফলে আপনার অনেক সময় সাশ্রয় হবে।
১১. Call-To-Action বাটন যুক্ত করা (Add Call-To-Action Button)
পেজের message বাটনের পাশে call-to-action বাটনটি দেখাবে। এটির সাহায্যে পেজে বিভিন্ন ধরনের বাটন যুক্ত করা যায়। যেমন- Use App , Contact Us , Sign Up , Shop Now , Book Now ইত্যাদি। এসব বাটনে প্রয়োজনীয় লিংক যুক্ত করা যায় বলে এটি আপনার পেজে ভিজিটর বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে।
১২. সঠিক URL যুক্ত করা (Add URL)
URL বা Uniform Resource Locator হলো কোনো ওয়েবসাইট বা পেজের একটি একক ঠিকানা। সাধারণত ফেসবুক প্রতিটি পেজের জন্য একটি নির্দিষ্ট URL প্রদান করে থাকে। তবে আপনি চাইলে নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটি URL সেট করে দিতে পারেন। About tab এ URL সেং করার অপশনটি দেয়া থাকে এবং পেজে কমপক্ষে ৩০ টি লাইক হলে এখান থেকে একটি URL নির্দিষ্ট করে দিয়ে দিতে পারবেন।
বন্ধুরা! প্রদত্ত ধাপগুলো ফলো করলে আশা করি আপনারা সহজেই একটি সুন্দর ও প্রফেশনাল লুক সম্পন্ন ফেসবুক বিজনেস পেজ খুলে নিতে পারবেন।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন আপনার পেজের প্রাণ হলো পেজের ভিজিটর। তাই বেশি বেশি ভিজিটর বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এর জন্য নিয়মিতভাবে পেজে পোস্ট করতে থাকুন এবং পেজটি শেয়ার করুন।
সুতরাং আশা করি কিভাবে ফেসবুকে একটি ব্যবসায়িক পেজ খুলতে হয় তা আপনাদের বুঝাতে পেরেছি।
ধন্যবাদ।
2 Comments