ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন
ইন্টারনেটের আবিষ্কার আমাদের জীবনযাত্রায় যে অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তার প্রমাণ এখন প্রতিটি পদে পদেই পাওয়া যায়। মানুষের ক্যারিয়ার , ইনকাম সোর্স সবকিছুই এখন ইন্টারনেট নির্ভর। কেউ জব করেন তো আবার কেউ করেন ব্যবসা। প্রচলিত ভাষায় যাকে বলা হয় অনলাইন বিজনেস। অর্থাৎ ইন্টারনেট এর সাহায্যে ব্যবসা করার যে প্রক্রিয়া তাকেই মূলত অনলাইন বিজনেস বা ব্যবসা বলা হয়ে থাকে।
বর্তমানে ইন্টারনেটের সাহায্যে উপার্জন করার যতগুলো সোর্স রয়েছে তাদের মধ্যে ফেসবুক (Facebook) অন্যতম। ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে ব্যবসা করে কেউ লাখপতি হচ্ছেন আবার কেউ কোটিপতি হচ্ছেন। তবে এগুলো কোনো গল্প নয়। এসবই সত্য। এখন ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা করে আপনিও অন্যান্যদের মত হয়ে যেতে পারেন স্বাবলম্বী।
তবে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে ফেসবুক এ কিভাবে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে হয়। কেননা হুট করেই আপনি বিজনেস শুরু করে দিতে পারবেন না বা সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে হতে হবে অত্যন্ত ধৈর্যশীল , পরিশ্রমী ও কৌশলী।
তাই ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই কয়েকটি ওয়ে বা উপায় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যে কারণে আজকের আর্টিকেলটিতে সে সমস্ত বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলেছি।
তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ফেসবুকে কিভাবে সহজেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করবেন।
ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা কিভাবে শুরু করব?
বন্ধুরা! আমরা সকলেই জানি যে প্রতিটি কাজ শুরু করার পূর্বে কিছু পূর্ব পরিকল্পনা প্রয়োজন হয়। নতুবা সেই কাজ কখনোই সুন্দর ও সঠিক হবে না। এখানে ফেসবুকে ব্যবসার ক্ষেত্রে একই বিষয় প্রযোজ্য। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে আপনার কিছু ব্যাপারে ক্লিয়ার ধারণা রাখতে হবে ও সে অনুযায়ী পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নেই সে বিষয়গুলো সম্পর্কে।
১. অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুন
কোনো কাজে অভিজ্ঞতা অনেক বড় জিনিস। আর পরামর্শ ব্যতীত কোন কাজই সঠিক ও সুন্দর হতে পারে না। তাই যদি কেউ অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্মে একেবারেই নতুন হয়ে থাকে তার জন্য প্রথমেই উচিত হবে এ কাজে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে উপদেশ নির্দেশ নেয়া।
কেননা ফেসবুকে এমন অসংখ্য ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা ইতিমধ্যে সফল ও অনেক আগে থেকে কাজ করছেন। যার ফলে তারা আপনাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
২. অন্যের কাজ দেখুন
ফেসবুকে এখন এমন কয়েকশ পেজ বা গ্রুপ রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ অনলাইনে ব্যবসা করে চলেছে। তাই বেশি বেশি ও নিয়মিত এসব পেজে বা গ্রুপে ভিজিট করে তাদের কাজ দেখুন ও শিখুন। পরবর্তীতে এসব অভিজ্ঞতা আপনার অনেক কাজে আসবে বলা বাহুল্য।
৩. ব্যবসার ধরন নির্বাচন করুন
ব্যবসা শুরু করার পূর্বে ব্যবসার ধরন নির্বাচন করতে হবে। কারণ ফেসবুকে বর্তমানে অনেক ধরনের ব্যবসা রয়েছে। যেমন- খাদ্য , পোশাক , জুয়েলারি , কসমেটিক্স , ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি।
তবে সবগুলোর জনপ্রিয়তা সবজায়গায় একই রকম হয় না। তাই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে ও যাচাই করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং প্রাথমিকভাবে যেকোনো একটি ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করতে হবে। পরবর্তীতে অভিজ্ঞতা ও সফলতার খাতিরে কয়েকটি ক্যাটাগরি একসঙ্গে নিয়েও কাজ করতে পারবেন।
৪. প্রোডাক্ট নির্ধারণ করুন
ব্যবসার ক্যাটাগরি নির্বাচনের পরে এখন আপনাকে প্রোডাক্ট নির্ধারণ করতে হবে। কেননা প্রথম পর্যায়ে সবগুলো প্রোডাক্ট নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা যেমন ঝামেলার আবার সব প্রোডাক্টের চাহিদাও একরকম থাকে না। এতে আপনার কাজ সুন্দর হবে না ও পণ্য বিক্রি হতে পারে।
যেমন- মনে করেন আপনি পোশাক নিয়ে ব্যবসা করতে চান। এখন আপনাকে ভাবতে হবে ফেসবুকে কি ধরনের পোশাকের চাহিদা ও ভোক্তা সবথেকে বেশি। যেমন- নারী ও শিশুদের পণ্যের চাহিদা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি নারী ও শিশুদের পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৫. ফেসবুক চালানো সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন
যেহেতু আপনি ফেসবুকের সাহায্যে ব্যবসা করতে চলেছেন তাই অবশ্যই আপনাকে ফেসবুক চালাতে অভিজ্ঞ হতে হবে। ফেসবুকের বিভিন্ন ফিচার ও বিভিন্ন সাইট কিভাবে চালাতে হয় বা ব্যবহার করতে হয় সেসব ব্যাপারে ভালোভাবে জানার ও শেখার চেষ্টা করুন।
বন্ধুরা! এতক্ষণ আমরা জানলাম যে ফেসবুকে ব্যবসা শুরুর পূর্বে আমাদের কি কি করতে হবে। তো এখন চলুন জেনে নেই কি কি উপায়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
ফেসবুক পেজ ( Facebook Page)
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অনলাইন ব্যবসা করার সর্বোত্তম উপায় হলো ফেসবুক পেজ। বিশেষত যারা বিগিনার তাদের জন্য ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করা সবথেকে ভালো একটি উপায়।
এর জন্য প্রথমে নিজস্ব ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এর দ্বারা একটি ব্যবসায়িক ফেসবুক পেজ ওপেন করতে হবে। এরপর বিভিন্ন উপায়ে পেজে ফলোয়ার্স বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখবেন আপনার পেজের ফলোয়ার্সরাই আপনার পণ্যের গ্রাহক। পেজে যত বেশি ফলোয়ার্স আসবে পণ্য তত বেশি সেল হবে। এবার পণ্য সেল করতে পেজে পণ্যের ভিডিও ও ছবি শেয়ার করতে হবে। যার দ্বারা আকর্ষিত হয়ে মানুষ আপনার পণ্য অর্ডার করবে।
ফেসবুক গ্রুপ (Facebook Group)
ফেসবুক গ্রুপ হলো ফেসবুক পেজের মতই একটি মাধ্যম যার দ্বারা আপনি অনলাইন ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন।
এক্ষেত্রে ফেসবুক পেজের মত করে একটি ফেসবুক গ্রুপ ওপেন করতে হবে। গ্রুপে ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে পণ্যের প্রচারণা চালাতে হবে। এরপর সে গ্রুপে মেম্বার এড করতে হবে। গ্রুপে যখন কয়েক হাজার মেম্বার হয়ে যাবে তখন আপনার পণ্য সহজেই সেল হতে থাকবে। মূলত ছোট আকারের যে কোনো ব্যবসা আপনি ফেসবুক গ্রুপের সাহায্যে সহজেই ঘরে বসে চালিয়ে নিতে পারবেন।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস (Facebook Marketplace)
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস হলো ফেসবুকের একটি অফিশিয়াল অংশ যেখান থেকে যেকোনো ধরনের পণ্য সেল করে অনলাইন ব্যবসা করা যায়।
এর জন্য পার্সোনাল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এ লগ ইন করতে হবে। এরপর ব্যবসার ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে পণ্যের ছবি যুক্ত করতে হবে। এখানে পণ্যের দাম ও গ্রাহকের বয়স ও শ্রেণী উল্লেখ করতে পারেন। ফলে আপনার পণ্য শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের নিকটে চলে যাবে এবং আপনার পণ্য অনেক দ্রুত গতিতে সেল হতে থাকবে।
ফেসবুক অ্যাড ( Facebook Ad)
ফেসবুকে এড বা বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে ব্যবসার পরিসর অনেক দ্রুত বাড়ানো যায়। এর জন্য পেইড ফেসবুক মার্কেটিং ( Paid Facebook Marketing) অত্যন্ত ফলপ্রসূ একটি উপায়। ফেসবুক এড এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করার ফলে পণ্যের সেল বহুগুণ বেড়ে যায় এবং সময় সাশ্রয় হয়। তবে যেহেতু এটি পেইড তাই আপনার টাকা খরচ হবে তা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম প্রথম খুবই সামান্য পরিমাণ টাকা খরচ করেও বিজ্ঞাপন দেয়া যায়।
তাছাড়া আপনার পেজে যদি অনেক বেশি পরিমাণ ফলোয়ার্স থাকে তবে অন্য কোনো নতুন পেজ বা ব্রান্ডের হয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করেও অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)
ফেসবুকের সাহায্যে অনলাইনে ব্যবসা করার আরেকটি ভালো ও কার্যকর উপায় হলো এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing)। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো ফেসবুক পেজ বা গ্রুপের মাধ্যমে কোনো কোম্পানির বা ব্রান্ডের পণ্য বিক্রি করিয়ে তার থেকে কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবসা করে আয় করা।
এর জন্যেও আপনার একটি ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ থাকতে হবে এবং সেখানে যথেষ্ট পরিমাণ ফলোয়ার্স (Followers) থাকতে হবে। এরপর পেজ বা গ্রুপে নির্ধারিত পণ্যের পজিটিভ রিভিউ প্রদানের মাধ্যমে পণ্য সেল করে কোম্পানি থেকে তার উপর কমিশন লাভের মাধ্যমে ব্যবসা করতে পারেন।
প্রিয় পাঠকগণ! আশা করি এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন ফেসবুকে অনলাইন ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন। তবে ব্যবসা শুরু করার সময় আপনাকে আরও কিছু বিষয় সতর্কতার সাথে মেনে চলতে হবে। যেমন-
- ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে প্রফেশনাল লুক দেয়া।
- আকর্ষণীয় প্রোফাইল ফটো ও কভার ফটো যুক্ত করা।
- ভালো মানের ছবি ও ভিডিও আপলোড করা।
- পণ্যের বিবরণী প্রচার করা।
- ভালো মানের আর্টিকেল পেজ পাবলিশ করা।
- বেশি বেশি মেম্বার এড করা।
- সহজলভ্য পেমেন্ট মেথড রাখা। যেমন- মোবাইল ব্যাংকিং।
- ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেম রাখা।
- সম্ভব হলে হোম ডেলিভারি দেয়া।
- অনলাইনে অ্যাক্টিভ হওয়া।
- যথাসময়ে ক্রেতার সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া।
- ক্রেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করা।
- পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখা ও আকর্ষণীয় প্যাকেজিং করা।
শেষ কথা
ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইনে ব্যবসা করতে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আশা করি আর্টিকলটিতে দিতে পেরেছি।
সুতরাং আর্টিকেলটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন ও সঠিকভাবে ফলো করেন তাহলে আপনিও ফেসবুকের সাহায্যে অনলাইন ব্যবসা করে বেকারত্ব দূর করে একজন স্বাবলম্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
তবে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণ ধৈর্য্য রাখবেন এবং চেষ্টা ও পরিশ্রম করে যাবেন। কেননা চেষ্টা ব্যতীত কোন কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই কথায় আছে , কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে।
তো বন্ধুরা! ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আজকের আর্টিকেল এর ব্যাপারে আপনার মতামত কমেন্টে জানান।
ধন্যবাদ।
One Comment