নারী উদ্যোক্তা কাঁকনের এফ-কমার্সে সফলতার গল্প

‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
কবিতার মতোই নারী-পুরুষ একে অন্যর পরিপূরক। তবে এ পূর্ণতাকেই নানাভাবে অপূর্ণতায় রাখা হয় আমাদের দেশে। আমরা চার পাশটা খেয়াল করলে দেখা যাবে, সব জায়গায় সবকিছুতেই পুরুষের আধিপত্য দিয়ে ভরা। বেশ কিছু বছর আগেরও নারীদের ঘর সামলানো ছাড়া বাহিরে কাজে বা ব্যবসায় খুবই কম দেখা যেত। কিন্তু এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কেও বিভিন্ন ব্যবসায় দেখা যায় । অনেক নারী ব্যবসায় উদ্যোগ নিয়ে সফলও হয়েছেন।
সফলতার গল্প
শূন্য হাতে শুরু করে এখন সফল উদ্যোক্তা। তবে এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও আনন্দ সুখের অনেক কাব্য। যার কথা বলছি তিনি “ফারজানা’স কিচেন” এবং “Farzana’s World” স্বত্বাধিকারী ইশরাত ফারজানা আলম কাঁকন। তিনি জানিয়েছেন শখ নিয়ে সময় কাটানো থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।
পরিচয় ও শিক্ষা
আমি ইশরাত ফারজানা আলম কাঁকন,একজন গৃহিনী ও একজন উদ্যোক্তা। ২০০৬ সালে বিয়ে হয় বিয়ের পরে এইচ এস সি পাশ করি। এরপর সংসার ও সন্তানদের জন্য পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এস এস ফাইনাল পরীক্ষা দিবো। ছোট বেলাতেই সেলাই এর হাতেখড়ি হয় আমার মায়ের কাছে। এরপর ২০১১ তে ব্লক,বাটিকও দর্জি বিজ্ঞানের উপর প্রশিক্ষণ নেই ।
২০১৪ থেকে কয়েকজন মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকেই টেইলারিং এর কাজ শুরু করি। এর পাশাপাশি নিজেরাই এপ্লিক,কাটওয়ার্ক ও সুতার কাজের ড্রেস, শাড়ি তৈরী ও বিক্রয় করা শুরু করি। ২০১৯ সালে SEIP -BWCCI থেকে Food & Beverage এর উপর ৬০ দিনের ট্রেনিং নেই। ট্রেনিং শেষ করে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকেই খাবারের বিজনেস শুরু করি। এছাড়া TMSS ট্রেনিং সেন্টারে SEIP – BWCCI কতৃক Food & Beverages এর Social Mobilizer হিসেবে নিযুক্ত আছি । ২০২০ সালে Business Management Training করি। বেকিং ও কুকিং ক্লাস করাই নিজের বাসাতেই।
খাবারের বিজনেস এর শুরুটা ছিল স্কুলে বাচ্চাদের টিফিন নিয়ে। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল ও বিয়াম মডেল স্কুলের ক্যান্টিনে নিয়মিত বার্গার ও স্যান্ডুইচ দিতাম। ২০২০ সালের মার্চে করোনার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার বিজনেস ও বন্ধ হয়ে যায়। অফলাইন এ কাপড়ের বিজনেস ঠিক মতোই চলছিল কিন্তু খাবারের বিজনেস টা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পরে যাই। মূলত তখন থেকেই আমার অনলাইন খাবারের বিজনেস শুরু।
এফ-কমার্সে বিজনেস এর শুরুটা ছিল Women and e – Commerce forum (WE) প্লাটফরম থেকে। WE গ্রুপের মাধ্যমে ২০২১ সালে অনলাইন এ কেক ডেকোরেশন এর উপর এক দিনের একটা কোর্স করি। এই গ্রুপের মাধ্যমেই আমার প্রথম অনলাইন বিজনেস এর শুরু এবং WE গ্রুপে শুধু মাত্র হোমমেইড খাবার সেল করে বগুড়া থেকে আমি প্রথম লাখপতি হই। আমার হোমমেইড খাবারের মধ্য রয়েছে কেক,বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট, ফ্রোজেন রুটি,পরোটা, সিংগারা,সামুচা,রোল ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আমার খাবারের মধ্য সবচেয়ে বেশি সেল হয় কেক,ফ্রোজেন পরোটা,সামুচা ও পিঠা।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে অনেকেই এফ-কমার্সে বিজনেস করছেন । তাই প্রতিযোগিতাও বেশি সেই দৃষ্টি কোন থেকে মোটামুটি ভালই চলছে আমার বিজনেস। মাসিক ৫০০০০ থেকে ৮০০০০ টাকার মতো সেল হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভবিষ্যৎ ইচ্ছে আছে একটা খাবারের দোকন করার যেখানে শুধু হোমমেইড খাবার থাকবে, আর বড় পরিসরে স্কুলের ক্যান্টিন গুলোতে টিফিন দেয়ার যাতে করে বাচ্চারা মান সম্মত হেলদি খাবার খেতে পারে। এছাড়াও অনলাইন বিজনেস এর পরিধিও বড় করার চেষ্টা করছি। কাপড় ও খাবারের পাশাপাশি ম্যাক্রামে (Macrame) পন্য নিয়েও কাজ শুরু করেছি। যদিওবা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এই পন্য সম্পর্কে জানে না কিন্তু বিদেশে এই পন্যর অনেক চাহিদা,তাই আমার ইচ্ছে আছে এই পন্য নিয়ে কাজ করার যাতে করে আমাদের দেশেও ম্যাক্রাম পন্যর পরিচিতি বাড়ে।
সামাজিক ব্যবস্থায় নারীরা এখনো পিছিয়ে রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে নিজেকে প্রমাণিত করতে হয় একজন নারীকে। তাই তার জন্য স্বাবলম্বী হওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
One Comment