এফ-কমার্স টিপস

F-Commerce কী ? বাংলাদেশে F-Commerce এর বর্তমান অবস্থান

প্রযুক্তির আশীর্বাদ বর্তমান বিশ্বকে নিয়ে গিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। আমাদের প্রাত্যহিক জীবন যেন প্রযুক্তির প্রয়োগ ছাড়া সম্পূর্ণ অচল। এরই প্রেক্ষিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মত বাংলাদেশেও প্রযুক্তির একাংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ দিনের একটি দীর্ঘ সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ব্যয় করে থাকে। কেননা দেশের টোটাল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৩ % ব্যবহারকারী ফেইসবুক ব্যবহার করে থাকেন। যে জন্য বর্তমান কালে ফেইসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফেইসবুকে F-Commerce একটি বহুল আলোচিত শব্দ। কিন্তু যারা এখনও এফ-কমার্স(F-Commerce) কি এ সম্পর্কে জানেন না আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য।

F-Commerce কী ?

মূলত এফ-কমার্স হলো ফেসবুক কমার্স এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এফ-কমার্স (F-Commerce) বলতে বুঝায় ইন্টারনেট এর সাহায্যে ফেইসবুক ব্যবহার করে ফেসবুক পেজ তৈরির মাধ্যমে ব্যবসা করা এবং ব্যবসায়িক সেবা গ্রহণ করা। অর্থাৎ এফ-কমার্স হল একটি ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া যা ফেইসবুক পেইজ এর মাধ্যমে ব্যাক্তিগত ভাবে কিংবা গ্রুপ আকারে সম্পাদনা করা হয়।

মূলত ব্যবসা বলতে আমরা যে রকম প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসা কে বুঝে থাকি সেখানে এফ-কমার্স হল সম্পূর্ণ রূপে প্রযুক্তি নির্ভর এক ধরনের ব্যবসা। যেমন- মনে করুন আপনি নিজেকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে ব্যবসায়ী হতে চান। কিন্তু আপনার মূলধন খুবই স্বল্প। যা দ্বারা দোকান ভাড়া করা কিংবা আনুষঙ্গিক খরচাদি মেটানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনার জন্য এফ-কমার্স (F-Commerce) অত্যন্ত সহায়ক একটি মাধ্যম। ফেসবুকে একটি ব্যক্তিগত পেজ ওপেন করে সেখানে আপনার পণ্যের বিবরণসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আপনার পণ্য পৌঁছে দিতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের নিকট। এক্ষেত্রে এই পুরো প্রক্রিয়াটি হলো এফ-কমার্স বা ফেসবুক কমার্স।

কিংবা মনে করুন আপনি একজন চাকরিজীবী। আপনাকে সর্বদা আপনার কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। এসময় আপনার বাইরে বেড়িয়ে মার্কেটে যেয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করা দুরূহ একটি ব্যপার। কিন্তু আপনি ফেসবুকে এমন একটি পেজের কথা জানতে পারলেন যেখান থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যাদি সুলভ মূল্যে আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হয়। তো আপনি তৎক্ষণাৎ ঐ পেজে লগইন করলেন এবং দরকারি পণ্য অর্ডার করবেন। কিছু সময়ের মধ্যেই আপনার অর্ডারটি কনফার্ম হয়ে গেল এবং নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর পণ্য পৌঁছে গেল আপনার গন্তব্যে। এইযে যে প্রক্রিয়ায় আপনি ফেইসবুকের সাহায্যে আপনার পণ্য ক্রয় করলেন একেই বলা হয় এফ-কমার্স বা ফেসবুক কমার্স। 

বাংলাদেশে এফ-কমার্স এর বর্তমান অবস্থা

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতুলতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কে গড়ে তুলেছে অত্যধিক জনপ্রিয়। যাদের মধ্যে ফেসবুক অন্যতম। ফেসবুকের ব্যবহার কে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে এফ-কমার্স বর্তমান বাংলাদেশে বহুল আলোচিত ও প্রচলিত একটি ব্যবসা পদ্ধতি। চলুন তাহলে এক নজরে দেখে নেয়া যাক বাংলাদেশে এফ-কমার্সের বর্তমান অবস্থা: 

  • বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক এ ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এর পরিমাণ প্রায় ৩১২ কোটি টাকা।
  • এফ-কমার্স এ মোট উদ্যোক্তার ৫০%- ই নারী ।
  • এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এফ-কমার্স সম্পর্কিত ফেসবুক পেজের সংখ্যা তিন লাখের উপরে।
  • এসকল পেজ থেকে উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় গড়ে দশ হাজার থেকে এক লক্ষাধিক টাকা।
  • এফ-কমার্স সুবিধা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৭২% ই পুরুষ।

এফ-কমার্স কেন করবেন ?

এফ-কমার্স কোন ক্ষুদ্র বিষয় নয়। নানান মুখি সুবিধা নিয়ে এফ-কমার্সের শুভাগমন আমাদের জীবনব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্যই এফ-কমার্স (F-Commerce) একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার নাম। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটিয়ে জীবন ব্যবস্থার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে এফ-কমার্সের ভূমিকা অত্যন্ত কার্যকর। যেমন-

  • বেকারত্ব বিমোচনের জন্য এফ-কমার্স (F-Commerce)সবথেকে বড় ভূমিকাটি পালন করে চলেছে। যেকোনো শ্রেণীর যেকোনো বয়সী একজন মানুষ এফ-কমার্সের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারেন।
  • নারী সম্প্রদায়কে বৈষম্যের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে এফ-কমার্সের গুরুত্ব অবর্ণনীয়। এফ-কমার্স এর সহায়তায় একজন নারী খুব সহজেই অর্থ উপার্জন করতে পারেন ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
  • এছাড়া যারা ব্যবসা করার কথা ভাবছেন কিন্তু স্বল্প পুঁজি থাকার কারণে এগুতে পারছেন না তাদের জন্য এফ-কমার্স (F-Commerce)একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। খুবই কম পুঁজি নিয়েও যে কেউ এফ-কমার্সের মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করতে পারে।
  • সব ধরনের উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার এবং বৃহৎ পরিসরে ব্যবসা পরিচালনার জন্য এফ-কমার্স একটি ফলপ্রসূ উপায় বা পদ্ধতি ।
  • প্রায় বিনা খরচে প্রচার প্রসার ও বিক্রয়ের কারণে এফ-কমার্সে ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক।
  • এফ-কমার্স (F-Commerce) ডিজিটাল মার্কেটিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য আদর্শ একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
  • প্রাত্যহিক ব্যস্ততার কারণে সময় করে মার্কেটে যাওয়া যেমন ভাবনার বিষয় সেখানে এফ-কমার্সের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করা সম্ভব হয়। যার ফলে সময় ও শ্রম দুটোই লাঘব হয়।
  • দেশের প্রায় ৯৩% জনগোষ্ঠী ফেসবুক ব্যবহার করার কারণে এফ-কমার্সের সেবা প্রায় সকলের নিকট পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়।

এফ-কমার্স কিভাবে করবেন ?

আপনি যদি এফ-কমার্সের সহায়তায় নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তবে ব্যাপারটি আপনার জন্য খুবই সহজ। এক্ষেত্রে অনেক কম খরচেই আপনি আপনার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এজন্য প্রথমত আপনার একটি ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এরপর সেখানে একটি ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ওপেন করবেন এবং অন্যান্য জনপ্রিয় পাবলিক পেজগুলোতেও মেম্বারশিপ গ্রহণ করবেন। এখন এসব পেজে আপনার পণ্যে বিবরণিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করবেন। এর ফলে খুব সহজেই আপনি আপনার পণ্যের অর্ডারগুলো পেতে শুরু করবেন। এরপর অর্ডারগুলো কনফার্ম করে যথাসময়ে পণ্য পৌঁছে দিতে হবে গ্রাহকের নির্দিষ্ট ঠিকানায়। এভাবেই ধীরে ধীরে আপনি এফ-কমার্স প্লাটফর্মে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করবেন।

অথবা আপনি যদি একজন গ্রাহক হন এবং এফ-কমার্স সেবা গ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার সর্বপ্রথম একটি ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। অতঃপর যে সকল পেজ এফ-কমার্স সেবা প্রদান করে থাকে সেই সব পেজে মেম্বারশিপ গ্রহণ করে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য অর্ডার করে খুব সহজেই ঘরে বসে পণ্য ক্রয় করতে পারেন।

এফ-কমার্সের চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা !

এটি একটি কঠিন সত্য যে কোনো কিছুরই একতরফা ভালো গুণ নেই বা থাকতে পারেনা। এফ-কমার্সও এর ব্যতিক্রম নয়। নানামুখী ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি এফ-কমার্সের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যা এফ-কমার্সের সাফল্যের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।যেমন-

  •  যে সকল ব্যবসায়ী ঢাকায় বসে ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন তাদের বেশিরভাগ পণ্য ঢাকার বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। ফলে সর্বোপরি খরচ ও পরিশ্রম মিলিয়ে ব্যবসায় লাভের মুখ দেখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যায়। 
  • তাছাড়া এফ-কমার্সে যেহেতু পণ্য ক্রয় বিক্রয় কেবল পণ্যের ছবি দেখে করা হয় তাই এখানে শতভাগ  সততা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
  • পাশাপাশি আমাদের দেশে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থায়  অনেক পরিবর্তন আনা বাকি। যার জন্য কিছু কিছু জায়গায় অনেকসময় পণ্য সরবরাহ করা অনেক কঠিন হয়ে যায়।
  • বাংলাদেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও ইন্টারনেটের সম্পূর্ণ সেবা পৌঁছে নি। যার ফলে দেশের প্রতিটি কোণে এফ-কমার্সের সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় না।

তাই এসকল নেতিবাচক দিক এড়িয়ে এফ-কমার্স এ সফলতা অর্জন করতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা অবশ্য জরুরি। পাশাপাশি প্রত্যেককে কাজের ক্ষেত্রে শতভাগ সততা ও নিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় কেই একে অন্যের সহায়ক হতে হবে।

পরিশেষ

বন্ধুরা! আশা করি আর্টিকলটির মাধ্যমে আপনারা এফ-কমার্স কি এবং এফ-কমার্স সম্পর্কিত অন্যান্য সকল প্রশ্নের উত্তর ইতিমধ্যে পেয়ে গিয়েছেন। তবুও আপনাদের যদি আর কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন।

ধন্যবাদ।

Related Articles

Back to top button
error: Content is protected !!